রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪১ অপরাহ্ন
সারাদেশ ডেস্ক ॥
জাপানের টোকিওস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। শুক্রবার ভোর ৭টা ৩০ মিনিটে বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে এ দিবসের কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রথমে দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়্যার্স ড. শাহিদা আকতারের নেতৃত্বে কর্মকর্তারা ও তোশিমা সিটির ভাইস মেয়র মাসাতো সাইতো পুস্পস্তবক অর্পণ করেন এবং পরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ও অন্যান্য অতিথিরা প্রভাতফেরীর মাধ্যমে শহীদ মিনার বেদীতে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।
অনুষ্ঠানের পরবর্তী অংশে দূতাবাস প্রাঙ্গণে চার্জ দ্য অ্যাফেয়্যার্স আয়োজিত আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয়। এ সময় উপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানান। পরে ভাষা শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে উপস্থিত দেশি-বিদেশি নাগরিকদের নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দেয়া বাণী পাঠ করেন যথাক্রমে দূতাবাসের কাউন্সিলর ড. জিয়াউল আবেদিন, ড. আরিফুল হক, মো. জাকির হোসেন এবং প্রথম সচিব মুহা. শিপলু জামান।
তৎকালীন পাকিস্তান শাসনামলে বাংলা ভাষার অবস্থান নিয়ে বাঙালির মনেপ্রাণে যে ভাষাচেতনার প্রকাশ ঘটে, তারই সূত্র ধরে বিভাগোত্তর পূর্ববঙ্গের রাজধানী ঢাকায় ১৯৪৭ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে ভাষা-বিক্ষোভ শুরু হয়। ১৯৪৮ সালের মার্চে এ নিয়ে সীমিত পর্যায়ে আন্দোলন হয় এবং ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি তার চরম প্রকাশ ঘটে।
কি ঘটেছিল সেদিন? দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার ৮ ফাল্গুন, ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি। ওইদিন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে বেরিয়ে এলে তৎকালীন পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। এতে আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, আবদুস সালমসহ কয়েকজন ভাষার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ ঢাকাবাসী ঢাকা মেডিকেল হোস্টেলে সমবেত হয়। নানা নির্যাতন সত্ত্বেও ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ জানাতে পরের দিন ২২ ফেব্রুয়ারি পুণরায় রাজপথে নেমে আসে। তারা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে শহীদদের জন্য অনুষ্ঠিত গায়েবি জানাজায় অংশগ্রহণ করে।
ভাষা শহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি এক রাতের মধ্যে মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে গড়ে ওঠে একটি স্মৃতিস্তম্ভ, যা তৎকালীন সরকার ২৬ ফেব্রুয়ারি গুঁড়িয়ে দেয়। একুশে ফেব্রুয়ারির এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলন আরও বেগবান হয়। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করলে ৯ মে অনুষ্ঠিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। আর এরই মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় ভাষা আন্দোলনের স্বার্থকতা।
ইউনেস্কোর স্বীকৃতি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ১৯৯৮ সালে কানাডার ভ্যানকুভার শহরে বসবাসরত দুই বাঙ্গালী রফিকুল ইসলাম এবং আবদুস সালাম প্রাথমিক উদ্যোক্তা হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার আবেদন জানিয়েছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে ।
১৯৯৯ সালে ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে জাতিসংঘ। ঘোষণার পর ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্যদেশসমূহে যথাযথ মর্যাদার সাথে পালিত হচ্ছে।
২০১০ সালের ২১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে এখন থেকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করবে জাতিসংঘ। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে পাস হয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের প্রস্তাবটি সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে উত্থাপন করে বাংলাদেশ।
বাংলা ভাষা, বাঙালি জাতির ইতিহাস যতদিন এই পৃথিবীতে সমুন্নত থাকবে ততদিন বাঙালি জাতি এই মহান ভাষা সৈনিকদের নম্রচিত্তে স্মরণ করবে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’।